ক্লাসের চাপে নাকাল স্নাতক পর্যায়ের কলেজ শিক্ষকরা। একজন শিক্ষককে সপ্তাহে ২০-২২টি ক্লাস নিতে হচ্ছে। যেসব কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর আছে সেখানে চাপ আরও বেশি।

এছাড়া পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি, অভ্যন্তরীণ, বোর্ড ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরপত্র মূল্যায়ন, শিক্ষার্থীদের পরামর্শদান, ল্যাবরেটরিতে কাজসহ আনুষঙ্গিক অনেক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

ক্ষেত্র বিশেষে কাউকে প্রশাসনিক কাজও করতে হয়। সব মিলে কাজের চাপে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় গ্রাম পর্যায়ের কলেজেও অনার্স-ডিগ্রি স্তর চালু করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সংশ্লিষ্টদের মতে, চাপের প্রধান কারণ শিক্ষক সংকট। সরকারি কলেজে নিয়মিত বিসিএসের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয় না। জাতীয়করণ করা কলেজে নিয়োগ-পদায়ন বন্ধ। বেসরকারি কলেজে কোথাও আর্থিক কারণে নিয়োগ হয় না।

এজন্য ভুগতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের মুখের দিকে তাকিয়ে তারা অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন। জনবল কাঠামো অনুযায়ী শিক্ষক এবং পদমর্যাদা অনুযায়ী ‘ওয়ার্কলোড’ বণ্টন করে দেওয়া হলে সংকটের অবসান হবে বলে মনে করেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উল্লিখিত নিয়ম বাস্তবায়িত হলে শিক্ষকদের ক্লাসের চাপে পড়তে হতো না। কিন্তু খুব কম কলেজে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক আছে। গত মে মাসের হিসাব অনুযায়ী, ৩ শতাধিক সরকারি কলেজ ২২৮৯টি পদ শূন্য আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট পদ আছে ১৫ হাজার ৯৫১টি। অধ্যাপক থেকে বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতি, অবসর, মৃত্যু ও পদত্যাগজনিত কারণে গড়ে প্রতিবছর ৪৫-৫০টি পদ শূন্য হচ্ছে। এটা সহসা পূরণ হয় না।

একেকটি বিসিএস শেষ করতে প্রায় ২ বছর লেগে যায়। ফলে গড়ে দেড়-দুই হাজার প্রভাষকের পদ সব সময়ই খালি থাকে। এছাড়া নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়ায় অধ্যাপকসহ বাকি তিন স্তরেও পদ শূন্য থাকে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন কলেজ থেকে পদের শূন্যতার তথ্য জানিয়ে মাউশিতে চিঠি পাঠান অধ্যক্ষরা। কিন্তু এর সুরাহা হয় না। কেননা অনেকেই মফস্বলে গিয়ে চাকরি করতে চান না।

শিক্ষক ঘাটতি আছে বেসরকারি কলেজেও। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১৬ হাজার শিক্ষকের পদ শূন্য। মফস্বলে আর্থিক অবস্থার কারণে ডেকেও শিক্ষক পায় না অনেক কলেজ।

এই অবস্থার মধ্যে আবার গ্রাম পর্যায়েও কলেজে অনার্স-ডিগ্রি স্তর চালু করে দিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া অভিযোগ আছে, যথাযথ পরিদর্শন ছাড়াই কলেজে অনার্স-মাস্টার্স অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু মফস্বলের বেশিরভাগ কলেজে সেই সামর্থ্য নেই। নামমাত্র যা দেওয়া হয় এতে অনেকে চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আর সমাজে পরিচয় দেওয়ার জন্য যারা টিকে আছেন, ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এই অবস্থায় অনার্স বা মাস্টার্স পাঠদান কী হয় তা সহজেই অনুমেয়।

ক্লাস বণ্টনে আছে সমাধান : সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যমান শিক্ষক দিয়েই ক্লাসের চাপের সমাধান সম্ভব। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি প্রথা চালু আছে। সে অনুযায়ী, একজন অধ্যাপক সপ্তাহে ১০টি ক্লাস নেন।

এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক ১২টি, সহকারীরা ১৪টি আর প্রভাষকরা ১৬টি ক্লাস নেন। তবে কোনো বিভাগে যদি শিক্ষক কম থাকে এবং কোর্স অনুযায়ী ক্লাস সংখ্যা বেশি হয়ে যায় তখন আনুপাতিক হারে তা জুনিয়র থেকে সিনিয়রদের বণ্টন করা হয়।

এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের টিচিং লোড ক্যালকুলেশন নীতিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করছে। প্রস্তাবিত ওই নীতিমালায় প্রত্যেক শিক্ষকের সপ্তাহে অন্তত ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে।